Onlinebdpolitics By Animesh Panday

এই পরিবর্তন ফলপ্রসূ হোক

Author:
Animesh Panday

Share on :

জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো শাসকই যে টিকতে পারেন না, বাংলাদেশে আবারও তা প্রমাণিত হলো। ২০০৯ সালে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসা শেখ হাসিনা ও তাঁর দল আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার দৃশ্যপট থেকে বিদায় নিতে হলো অত্যন্ত লজ্জাজনকভাবে। শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা গণ–আন্দোলনের মুখে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এই পরিবর্তনকে একটি দীর্ঘস্থায়ী ফলপ্রসূ করে তোলাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন সহজেই সামাল দেওয়া যেত, তাকে এমন একটি সহিংস পরিণতির দিকে ঠেলে দেওয়ার পেছনে যা কাজ করেছে, তা হচ্ছে সরকার ও বিশেষ করে সরকারপ্রধানের একগুঁয়ে আচরণ। এর কারণে কোটা সংস্কারের মতো একটি নিরীহ ও অরাজনৈতিক আন্দোলনে তিন শতাধিক মানুষকে জীবন দিতে হলো, মূল্যবান রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস হলো।

যেকোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ব্যক্তির চেয়ে দল বড় এবং দলের চেয়ে দেশ বড় হয়। কিন্তু শেখ হাসিনা নিজেকে দল ও দেশের ঊর্ধ্বে ভাবতেন এবং তাঁর গত ১৫ বছরের শাসনে প্রতিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও দেশ ও দলের চেয়ে ব্যক্তি হিসেবে তাঁর একক কর্তৃত্বই দেখা গেছে।পদত্যাগ ও দেশত্যাগের আগের দিনও শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন দমনে দলের লোকজনকে অস্ত্রশস্ত্রসহ নামিয়ে দেশজুড়ে যে সহিংসতা ঘটালেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন কলঙ্কজনক ঘটনার দ্বিতীয় কোনো নজির নেই। এই আন্দোলনে ২১৩ জনের মৃত্যুর পরও যদি তিনি সংযত হতেন, তাহলে সেদিন ১৪ জন পুলিশ সদস্যসহ শতাধিক মানুষের প্রাণহানি এড়ানো যেত। এই দায় থেকে তিনি কোনো দিন মুক্তি পাবেন না।

শুরুতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনটি কোটা সংস্কারের দাবিতে সীমাবদ্ধ থাকলেও সরকার এই আন্দোলন দমনে যত নিষ্ঠুর ও কঠোর হয়েছে, ততই জনসমর্থন বেড়েছে এবং একপর্যায়ে তা আর সেখানে আটকে থাকেনি। ব্যাপক জনসম্পৃক্ততার এক পর্যায়ে তা সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়।

কারণ, আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনে তিন মেয়াদে জনগণ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে, সেই সঙ্গে দলের লোকজনের সীমাহীন দুর্নীতি, বিচারহীনতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও কার্যত একদলীয় শাসন কায়েমের মাধ্যমে দেশজুড়ে যে ভয়ের রাজত্ব কায়েম হয়েছিল, তা থেকে মানুষ মুক্তির পথ খুঁজছিল। ছাত্রদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন সেই সুযোগ করে দেয়।

প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার পর এখন দেশে আইনানুগ কোনো সরকার নেই। একটি নতুন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। আমরা মনে করি, আন্দোলনকারী ছাত্রসমাজ, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি, নাগরিক সমাজ ও সংবিধানবিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে একটি গ্রহণযোগ্য অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের কাজটি দ্রুত করতে হবে।

একটি গ্রহণযোগ্য সরকার গঠনের মাধ্যমে ভবিষ্যতের জন্য একটি স্থায়ী রাজনৈতিক বন্দোবস্তের পথ তৈরি করা গেলে এই পরিবর্তনকে ফলপ্রসূ করা সম্ভব হবে।

এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্যের বিরুদ্ধে। আমরা আশা করব, বৈষম্যে মুক্তির বিষয়টি সামনের দিনগুলোতে গুরুত্ব পাবে। সেই সঙ্গে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং ভোটের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের একটি কার্যকর ব্যবস্থা কায়েমের উদ্যোগ নেওয়া হবে।গত কয়েক দিনের আন্দোলনে যে তিন শতাধিক প্রাণ গেছে, তাঁদের পরিবারের প্রতি রইল আমাদের গভীর সমবেদনা। ছাত্র–জনতার এই আন্দোলনে যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছেন, আমরা তাঁদের অভিনন্দন জানাই। তাঁরা তাঁদের ত্যাগ ও সংগ্রাম দিয়ে যে বিজয় অর্জন করেছেন, তা যাতে কেউ নস্যাৎ না করতে পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

Share on :

Facebook
Twitter
LinkedIn
Pinterest
Reddit
Telegram
Email
12 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
Ajoy
4 months ago

এখনই সময় বাংলাদেশকে একটি ভালো অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার

Sahanuz
4 months ago

এখনো অনেক জায়গায় অসাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হচ্ছে যা এই আন্দোলনের সাথে যায় না

Kanka
4 months ago

এই পরিবর্তন ফল প্রসূ করতে হলে আমাদের প্রত্যেকের উচিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া

Akash
4 months ago

এখন থেকে বাংলাদেশের প্রত্যেকটা নাগরিককে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে

Palas
4 months ago

ছাত্র সমাজ আমাদের যে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে এটা কোনভাবেই নষ্ট হতে দেয়া যাবে না

Aminur
4 months ago

ভাই এখনো অনেক জায়গায় দুর্নীতির গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে যেটা কাম্য নয়

Islam
4 months ago

কিছু কিছু ছাত্ররা যেভাবে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করছে এটা এই আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে

Sanjib
4 months ago

একটা মহল সব সময় দেশের মধ্যে অরজগতা সৃষ্টি করে রাখতে চাই এদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে

Nasir ali
4 months ago

এখন আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যেন অন্য কোন সরকার এরকম কোন কিছু না করার সাহস না পায়

Dev
4 months ago

ভাই এই আন্দোলনকে সফল করার জন্য আমরা সবাই অংশগ্রহণ করেছিলাম কিন্তু এখনো অনেক জায়গায় হিন্দুদের উপর অত্যাচার হচ্ছে যা খুবই লজ্জাজন

Liton
4 months ago

আজ হাসিনা সরকার পতনের এক মাসের উপরে হয়ে গেল কিন্তু এখনো অনেক জায়গায় লুট ,সন্ত্রাস, ডাকাতি এবং দখলদারি হয়েই চলছে যা খুবই উদ্বেগ জনক

Milton
4 months ago

মূলত এই আন্দোলনটি ছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে যেখানে মুসলিম ,হিন্দু ,বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান নির্বিশেষে সবাই অংশগ্রহণ করেছিল যার ফলে স্বৈরাচার হাসিনা সরকার পতন হতে বাধ্য হয়েছে. এখন সময় আমাদের একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তোলার

Related post
12
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x
Scroll to Top