Onlinebdpolitics By Animesh Panday

ছাত্রলীগ : বড় অপরাধী তৈরির আওয়ামী হ্যাচারি। পর্ব—২

Author:
Animesh Panday

Share on :

কাউকে নির্মমভাবে নির্যাতন বা হত্যা করার পূর্বে ছাত্রলীগের সবচেয়ে প্রিয় কৌশল হলো টার্গেট ব্যক্তিকে আগে ‘শিবির’ ট্যাগ দেয়া।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের কথা আপনাদের মনে থাকার কথা। ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর তাকে হত্যা করা হয়। বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতারা তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছিল। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে নিশ্চিত করা হয়েছে যে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ভোঁতা জিনিসের মাধ্যমে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সন্দেহ করে যে আবরারকে তার সাম্প্রতিক একটি ফেসবুক পোস্টের কারণে আক্রমণ করা হয়েছিল, যা ভারতের সাথে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কিছু চুক্তির সমালোচনা বলে মনে হয়েছিল। মানুষের ন্যূনতম বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাস না করা সংগঠন ছাত্রলীগ বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় সন্ত্রাসী সংগঠন, যাদের হাতে অজস্র মানুষের রক্ত লেগে আছে। শুধু মুসলিম শিক্ষার্থী নয়, ছাত্রলীগের নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে পারে না হিন্দু শিক্ষার্থীরাও।
রাবিতে নির্যাতনের পর ‘শিবির ট্যাগ’ দিয়ে হিন্দু ছাত্রকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, ‘পরে আমাকে জোর করে নাঈম ইসলামের কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আমাকে ম্যানারের (আচরণ) অজুহাতে কান ধরতে বলেন। কান ধরতে না চাইলে তারা আবারও আমাকে মারধর করেন। এ সময় নাঈম বলে, ‘তোকে মেরে শিবির ট্যাগ দিয়ে দেব।’ কিন্তু আমি হিন্দু জানার পর বলে, ‘এখন তো তোকে মেরে ফেললেও কেউ কিচ্ছু করতে পারবে না।’ তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগ নেতা নাঈম ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীর সিট নিয়ে একটু কথা কাটাকাটি হয়েছিল। বিষয়টি সমাধান হয়ে গেছে। মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’

গত ৩১ জানুয়ারি নিজেদের পছন্দের প্রার্থী নিয়োগ না পাওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কার্যালয়ে ভাঙচুরের পর শাটল ট্রেন আটকে চাবি নিয়ে গেছে শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরা। এসময় শহর অভিমুখে রওনা করা শাটল অবরোধ করে সংগঠনটির নিষিদ্ধ বগিভিত্তিক উপগ্রুপ কনকর্ড অনুসারীরা। এ সময় ফতেয়াবাদ রেল স্টেশনে ট্রেনটি পৌঁছালে অবরোধকারীরা চাবি নিয়ে চলে যায়। এতে বিপাকে পড়েন শহরগামী হাজারো শিক্ষার্থী। সংবাদ মাধ্যমে চোখ রাখলে প্রতিদিন দেখতে পাই ছাত্রলীগের লাগামহীন সন্ত্রাস। সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসা কিছু খবর নিচে উদ্ধৃত করছি :

পবিপ্রবিতে বিড়ি খাওয়া নিয়ে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষ :গত ১২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি অনুষ্ঠান শেষে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান তারেকের সামনে এসে ধূমপান করেন শামীম নামের এক জুনিয়র। এসময় তারেকের এক অনুসারী এসে ধূমপান করার অপরাধে শামীমকে চড়-থাপ্পড় মারেন। এরপর শামীমের সঙ্গে থাকা তার সহপাঠীদের সঙ্গে মেহেদি হাসান তারেকের অনুসারীরা বাকবিতাণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীতে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। শামীম ও তার সহপাঠীরা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আরাফাত ইসলাম খান সাগরের অনুসারী।

এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি রাত ১১টায় রাবির শাহ মাখদুম হলের ২১৪ নম্বর কক্ষের সামিউল ইসলাম নামের এক আবাসিক শিক্ষার্থীকে মারধর করে মানিব্যাগ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিলো ওই হল ছাত্রলীগের সভাপতি তাজবিউল হাসান অপূর্বের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে কাউকে বললে প্রাণনাশের হুমকি দেন ওই নেতা। এ ঘটনায় নিজের নিরাপত্তা চেয়ে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। গত ২২ জানুয়ারি দিবাগত রাতে শহীদ শামসুজ্জোহা হলে বিছানাপত্রসহ মো. জাকির হোসেন নামে এক শিক্ষার্থীকে নামিয়ে দেয় অত্র হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মোমিন ইসলাম ও তাঁর কর্মীরা। পরে সেই সিটে আরেকজনকে তুলে দেয় মোমিন। বিষয়টি একাধিকবার হল প্রাধ্যক্ষকে জানালেও সমাধান না পেয়ে বিছানাপত্র নিয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয় ওই শিক্ষার্থী।

আতঙ্কের নাম ‘শিবির ট্যাগ’সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নির্যতনে ‘শিবির ট্যাগ’দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মারধরের আগে তাদের শিবির বলে চালিয়ে দেওয়া বা মারধরের পর তাদের শিবির আখ্যা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিংবা পুলিশের হাতে তুলে দিচ্ছেন ছাত্রলীগ নেতারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের ভাইবা দিতে এসে ছাত্রলীগের মারধরের শিকার হয়েছেন নুর হোসেন নামের এক নিয়োগপ্রার্থী। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ২০০৩-০৪ সেশনের ছাত্র ছিলেন। মারধরের পর ছাত্রলীগের নেতারা জানান, শিবির অভিযোগে তার ভাইবা বন্ধ করতে প্রশাসনের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়েছে।

চমেকের ৪ ছাত্রকে রাতভর পেটালেন ছাত্রলীগ কর্মীরাগত ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) ৪ শিক্ষার্থীকে কলেজ ছাত্রাবাসে আটকে রেখে মারধরের অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। চমেক সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রশিবিরের কর্মী সন্দেহে ওই দিন মধ্যরাত থেকে পরেরদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের ছাত্রাবাসের একটি কক্ষে আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ ও শারীরিক নির্যাতন করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। নির্যাতিত ৪ শিক্ষার্থী হলেন, জাহিদ হোসেন ওয়াকিল, সাকিব হোসেন, এম এ রায়হান ও মোবাশ্বের হোসেন শুভ্র। তারা সবাই এমবিবিএস ৬২ ব্যাচের শিক্ষার্থী বলে জানিয়েছে সিএমসি সূত্র। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় জাহিদ ও সাকিবকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) কৃষ্ণ রায় নামের এক শিক্ষার্থীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। এ সময় মারধর করে ওই শিক্ষার্থীকে শিবির ট্যাগ দিয়ে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়। ওইদিন (১২ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাবির শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী কৃষ্ণ রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অভিযুক্তরা হলেন, সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈম ইসলাম ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সোলাইমান।

অপরাধের শাস্তি কেবল বহিস্কারগত ১৩ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন ধরনের ৯টি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ২১ নেতা-কর্মীকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে ছাত্রলীগ। এক বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রলীগ জানিয়েছে, সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনবিরোধী, শৃঙ্খলাপরিপন্থী, অপরাধমূলক এবং সংগঠনের মর্যাদা ক্ষুণ্নকারী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অপরাধে তাঁদের বহিষ্কার করা হয়েছে। বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে এসব ঘটনায় পদক্ষেপ বা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে ছাত্রলীগ। অপরাধে জড়িত নেতা–কর্মীদের সংগঠন থেকে বহিষ্কারের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার যে দাবি জানিয়েছে ছাত্রলীগ।

বইমেলায় চাঁদাবাজির ঘটনায় দুই ছাত্রলীগ নেতাকে বহিষ্কার করলো ছাত্রলীগএছাড়া সবশেষ বইমেলার ৪ ক্রেতা থেকে পুলিশ পরিচয়ে চাঁদাবাজি করার ঘটনায় আটক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রলীগের দুই নেতা মোহাইমিনুল ইসলাম ইমন ও রাজিব হোসাইন রবিনকে বহিষ্কার করেছে ছাত্রলীগ। ইমন বাংলা বিভাগ এবং রবিন অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হাতে নির্যাতিত বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ক্যাম্পাসগুলোতে নিয়ন্ত্রণহীন ছাত্রলীগ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের অপরাধের বিষয়ে সম্যক অবগত থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। এর ফলে ছোটো-ছোটো অপরাধ করতে করতে একসময় বড় অপরাধে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে ছাত্রলীগের নেতারা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কিছু ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রলীগে উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মীদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে থাকে।

Please support us by visit and share your comments on:http://onlinebdpolitics.com and https://daily-nobojug.com/

Share on :

Facebook
Twitter
LinkedIn
Pinterest
Reddit
Telegram
Email
1 Comment
Inline Feedbacks
View all comments
Golap Rustam
1 year ago

মন্তব্য করে ছাত্রলীগের চক্ষুশীল হতে চাই না |আমার জীবনকে আমি অনেক ভালবাসি|

Related post
1
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x
Scroll to Top