Onlinebdpolitics By Animesh Panday

ছাত্রলীগ : বড় অপরাধী তৈরির আওয়ামী হ্যাচারি। পর্ব—১

Author:
Animesh Panday

Share on :

বিশ্বজিৎ দাসেরর কথা মনে আছে? ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর ১৮ দলের অবরোধ চলাকালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হওয়া এক দুর্ভাগা বাঙালি সন্তান। ছাত্রলীগ সংগঠনের কর্মীরা বিশ্বজিৎ দাসকে বিনা কারণে প্রকাশ্য-দিবালোকে শত শত মানুষ ও আইনরক্ষা বাহিনীর সদস্য এবং সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ঐদিন সকাল থেকে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে সরকারবিরোধী আন্দোলন চলছিল। পঁচিশ বছর বয়সী যুবক, পেশায় দর্জ্জি বিশ্বজিৎ দাস জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা হেঁটে পার হওয়ার সময় আন্দোলবিরোধীরা তাকে শিবিরকর্মী মনে করে আঘাত হানা শুরু করে। নির্বিচার কিল-ঘুষি-লাথি ছাড়াও এই শীর্ণকায় যুবককে লোহার রড দিয়ে পেটানো হয়। তদুপরি চাপাতির কোপে তাকে ধরাশায়ী করে ফেলা হয়। তিনি বারবার পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু দূর্বৃত্তরা তাকে বারবার ধাওয়া দিয়ে আঘাত করতে থাকে। অচেতন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে হত্যকারীরা চলে যায়। তখন তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেয়া হয়। অত্যাধিক রক্তক্ষরণে অচিরেই মৃত্যু হয় তার।

শুধু হত্যা বা ধর্ষণ নয়, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজি, ছিনতাই, আধিপত্য বিস্তার, ছাত্র নির্যাতন, হল দখল ও মাদকের কারবারসহ নানান অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে সব সময়েই আতঙ্কিত থাকে দেশের ক্যাম্পাসগুলো। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে প্রায় সব ক্যাম্পাসেই একইভাবে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এসব ঘটনায় বরাবরের ন্যায় ভুক্তভুগী হচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থী। কিছু শিক্ষার্থী তাদের বিরুদ্ধে সংগঠিত অন্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলেও তেমন কোনো আইনী প্রতিকার মিলছে না। কেবল কিছু চাঞ্চল্যকর অপরাধের সঙ্গে অভিযুক্তদের দল থেকে বহিষ্কার করছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালে প্রথম দেড় মাসের মধ্যে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মারামারি, ধর্ষণ, ছাত্র-ছাত্রী-শিক্ষক নির্যাতন, হল দখল, সিট বাণিজ্যসহ শতাধিক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে। তবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সূত্রে জানা গেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দ্বারা সংগঠিত অপরাধকর্মের অধিকাংশই সামনে আসে না। ভুক্তভুগীরা প্রাণভয়ে নির্যাতনের কথা চেপে যায়। আর কেউ কেউ অভিযোগ দিলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরবর্তী পদক্ষেপ নেয় না। এছাড়া, ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিতে গেলে গ্রহণ করতে চায় না পুলিশ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিতভাবে ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ মিলছে ছাত্রলীগ নেতাদের। ২০২৩ সালের শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আশপাশের এলাকায় ছাত্রলীগ নেতারা বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানা গেছে।

এর মধ্যে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় পুলিশ পরিচয়ে বইমেলার ৪ ক্রেতার কাছ থেকে চাঁদাবাজি করার ঘটনায় আটক হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রলীগের দুই নেতা মোহাইমিনুল ইসলাম ইমন ও রাজিব হোসাইন রবিন। ইমন বাংলা বিভাগ এবং রবিন অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

এর আগে গত ৪ ফেব্রুয়ারি শনিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস–সংলগ্ন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) মসজিদের সামনে একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। সেখানে একটি কাভার্ড ভ্যান আটকিয়ে চালক ও তাঁর ভাইকে মারধর করে তাঁদের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা ছিনতাই করেন তিন ছাত্র। ছিনতাইকারী তিনজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, যাঁদের মধ্যে দুজন বিজয় একাত্তর হলের গণরুমে থাকেন। গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীরা সবাই ছাত্রলীগের কর্মী।

একই দিন রাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় পরিবারের সদস্যসহ মারধর ও ছিনতাইয়ের শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক কর্মকর্তা। তাঁদের কাছ থেকে ২২ হাজার টাকা ও ব্যাংকের এটিএম কার্ড ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ছিনতাইকারীদের দুজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, একজন সূর্য সেন হল শাখা ছাত্রলীগের সদস্য।

১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিনতাইয়ের শিকার হন দুই শিক্ষার্থী। এসময় দুটি স্মার্টফোন এবং মানিব্যাগ খোয়ান তারা। এসময় ছিনতাইকারীর আক্রমণে আহত হয়েছেন বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের মুহাম্মদ মুরসালিন সরকার। ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ এ সকাল ১০টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মমতাজ উদ্দিন একাডেমিক ভবনের সামনে আমবাগান থেকে মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি চাঁদা না পেয়ে বাস টার্মিনালের টিকিট কাউন্টারে তালা ঝুলিয়ে দেন লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুল ইসলাম রকি। এছাড়াও তিনি বাস কোম্পানি যমুনা হাই ডিলাক্স পরিবহনের চালকের এক সহযোগীকে মারধর করেন। এ সময় তাকে সহযোগিতা করেন তার ভাই লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিব পাটওয়ারী।

ছিনতাইয়ের ন্যায় ছাত্রলীগের নির্যাতনের মাত্রাও বেড়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। এই নির্যাতন থেকে রেহাই পাচ্ছেন না শিক্ষক-ছাত্র-ছাত্রী কেউই। গত ৯ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে পরীক্ষার হলে দেখে লিখতে নিষেধ করায় এক শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠে কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কাজী নাঈমের বিরুদ্ধে। ওইদিন ডিগ্রি প্রথম বর্ষের পরীক্ষা চলাকালে এক ছাত্রের খাতা দেখে লিখছিলেন কাজী নাঈম। এ সময় অন্যের কাছ থেকে দেখে লিখতে নিষেধ করেন মুজাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এভাবে পরীক্ষার হলে দেখে লেখার সুযোগ নেই।’ এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেন এবং পিটিয়ে কলেজ থেকে বদলি করে দেওয়ার হুমকি দেন নাঈম।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ৪ শিক্ষার্থীকে কলেজ ছাত্রাবাসে আটকে রেখে মারধরের অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। চমেক সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রশিবিরের কর্মী সন্দেহে ওই দিন মধ্যরাত থেকে পরেরদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের ছাত্রাবাসের একটি কক্ষে আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ ও শারীরিক নির্যাতন করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। নির্যাতিত ৪ শিক্ষার্থী হলেন, জাহিদ হোসেন ওয়াকিল, সাকিব হোসেন, এম এ রায়হান ও মোবাশ্বের হোসেন শুভ্র। তারা সবাই এমবিবিএস ৬২ ব্যাচের শিক্ষার্থী বলে জানিয়েছে সিএমসি সূত্র। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় জাহিদ ও সাকিবকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ এ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে ডেকে নিয়ে এক ছাত্রীকে মারধর ও শারীরিক নির্যাতনের পর বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করার অভিযোগ উঠেছে এক ছাত্রলীগ নেত্রী ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। নেত্রীদের কথা না শোনার অভিযোগে তাঁকে সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে নির্যাতন করা হয়। মারধর, অকথ্য ভাষায় গালাগালি ও বিবস্ত্র করে নির্যাতন করা হয়। ভয়াবহ এই নির্যাতনের ঘটনা কাউকে বললে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। ভয়ে সেই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে বাড়ি চলে যান।

একইদিন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) এক ছাত্রকে মারধরের ঘটনায় সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতে মামলা হয়। মারধরের শিকার ছাত্রলীগ কর্মী ফারদিন কবীর বলেন, ১৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মো. সুমন ভূঁইয়ার আদালতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। পরে আদালত সিলেটের জালালাবাদ থানার ওসিকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। মামলার আবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক উপ-দফতর সম্পাদক সজীবুর রহমানের অনুসারী বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেনকে প্রধান আসামি করে ৯ জনের নামে এবং অজ্ঞাতনামায় আরও ১৪-১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়।

এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) কৃষ্ণ রায় নামের এক শিক্ষার্থীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। এ সময় মারধর করে ওই শিক্ষার্থীকে ‘শিবির ট্যাগ’ দিয়ে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়। ওইদিন ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে রাবির শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী কৃষ্ণ রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অভিযুক্তরা হলেন, সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈম ইসলাম ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সোলাইমান।

Please support us by visit and share your comments on:http://onlinebdpolitics.com and https://daily-nobojug.com/

Share on :

Facebook
Twitter
LinkedIn
Pinterest
Reddit
Telegram
Email
1 Comment
Inline Feedbacks
View all comments
Nezad bulu
1 year ago

হায়রে ছাত্রলীগ
বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।

Related post
1
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x
Scroll to Top