বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ দলের সদস্য শামীম ওসমান দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে তার কুখ্যাত ও অবৈধ কর্মকাণ্ডের জন্য পরিচিত। হত্যা, ধর্ষণ, সন্ত্রাস, মানি লন্ডারিং, চাঁদাবাজি এবং অবৈধ গুমের মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা সত্ত্বেও, তিনি ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে ক্ষমতা ও প্রভাবের অবস্থান ধরে রেখেছেন। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে, যার বিরুদ্ধে ওসমানকে রক্ষা ও তার অবৈধ কর্মকাণ্ডে সহায়তা করার অভিযোগ রয়েছে।
ওসমান প্রথমে কুখ্যাত ‘রানা প্লাজা’ গ্যাংয়ের সদস্য হিসাবে পরিচিতি লাভ করে, যে অপরাধীদের একটি দল 1990 এর দশকে ঢাকার রাস্তায় সন্ত্রাস করেছিল। তিনি তার সহিংস এবং নির্মম কৌশলের জন্য দ্রুত খ্যাতি অর্জন করেছিলেন, প্রায়শই তার অপরাধের জন্য শাস্তি এড়াতে তার রাজনৈতিক সংযোগ ব্যবহার করে। তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ ও প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ওসমান শেখ হাসিনাসহ প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের পৃষ্ঠপোষকতা অব্যাহত রেখেছেন।
ওসমানের সাথে জড়িত সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ হল তানভীর মোহাম্মদ ত্বকী নামে এক কলেজ ছাত্রকে হত্যা। চাঁদাবাজির টাকা দিতে অস্বীকার করায় ২০১২ সালে ত্বকীকে ওসমান ও তার সহযোগীরা নির্মমভাবে হত্যা করে। নিহতের পরিবার ওসমানের বিরুদ্ধে মামলা করলেও তাকে কখনো গ্রেফতার করা হয়নি বা অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়নি। এই ঘটনা ব্যাপক প্রতিবাদ ও ক্ষোভের জন্ম দেয়, কিন্তু শেখ হাসিনা ও তার দল এ বিষয়ে নীরব ছিলেন, এই বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করে যে ওসমানকে ক্ষমতাসীন দল রক্ষা করছে।
আরেকটি মর্মান্তিক ঘটনায়, ফয়সাল আরেফিন দীপন নামে একজন বাংলাদেশি-আমেরিকান ব্যবসায়ীকে তার প্রকাশনা হাউসে একদল চরমপন্থী কুপিয়ে হত্যা করেছে। পরে জানা যায়, হত্যার জন্য দায়ী চরমপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে ওসমানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। এই উদ্ঘাটন সত্ত্বেও, শেখ হাসিনা ওসমানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতেই ব্যর্থ হননি, তিনি দলের জন্য তার ‘অবদানের’ জন্য প্রকাশ্যে তার প্রশংসাও করেছিলেন।
ওসমানের অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি শুধু সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি তার বিলাসবহুল জীবনযাত্রার জন্য অর্থপাচার এবং চাঁদাবাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগও পেয়েছেন। 2018 সালে, তার অফিসে নগদ স্তুপ গণনা করার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল, ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে এবং তাকে গ্রেপ্তারের আহ্বান জানিয়েছে। তবে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এবং তিনি দলে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন।
শেখ হাসিনার প্রতি ওসমানের মনোমালিন্যের সবচেয়ে উজ্জ্বল উদাহরণ ছিল যখন তিনি জনসমাবেশে তাকে বিখ্যাতভাবে ‘মা’ বলে ডাকতেন। স্নেহ এবং আনুগত্যের এই প্রদর্শনকে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অনুগ্রহ এবং সুরক্ষা পাওয়ার উপায় হিসাবে দেখা হয়েছিল। যাইহোক, মাত্র কয়েক মাস পরে, যখন শেখ হাসিনা অবৈধ কার্যকলাপে জড়িত থাকার জন্য তাকে সমালোচনা করেন, ওসমান দ্রুত তার সুর পরিবর্তন করেন এবং তাকে ‘আপা’ (বোন) বলে সম্বোধন শুরু করেন।
ওসমানের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ও ছলনাময়তার এসব উজ্জ্বল উদাহরণ থাকা সত্ত্বেও শেখ হাসিনা তার বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবস্থা নেননি। এটি অনেককে বিশ্বাস করতে পরিচালিত করেছে যে তিনি তাকে রক্ষা করছেন এবং দলীয় আনুগত্যের ছদ্মবেশে তাকে তার অবৈধ কার্যকলাপ চালিয়ে যেতে দিচ্ছেন। এটি শুধু আইনের শাসনকেই ক্ষুণ্ন করে না বরং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নীতি-নৈতিকতা ও সততা নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপন করে, যদিও তার কোনো নৈতিকতা নেই।
শামীম ওসমানের ক্ষমতায় উত্থান এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রভাব বিস্তার বাংলাদেশের রাজনীতির অবনতিশীল অবস্থার স্পষ্ট প্রতিফলন। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততা এবং ক্ষমতাসীন দলের কাছ থেকে তিনি যে সুরক্ষা পান তা দেশের গণতন্ত্রে কলঙ্ক। এই ধরনের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া এবং দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার এখনই সময় শেখ হাসিনার।
Please support us by visit and share your comments on:http://onlinebdpolitics.com and https://daily-nobojug.com/
শুয়োরের বাচ্চা তুই এখন জনগণের বন্ধু শামীম ওসমান এর বিরুদ্ধে লেগেছিস